প্রতিদিন চুলে তেল দিলে কি হয় | Girls Hair Tips Bangla

প্রতিদিন চুলে তেল দিলে কি হয় | Hair Tips Bangla 

প্রতিদিন চুলে তেল দিলে কি হয়
প্রতিদিন চুলে তেল দিলে কি হয়

চুলের চুলচেরা যত্ন

চুল নিয়ে আকৃতির শেষ নেই, চুলের প্রতি আকর্ষণও দুর্বার কী পুরুষ কী না নিয়ে সবাই ভাবেন। এই ভাবনা বাস্তব জীবন পেরিয়ে জায়গা করে নিয়েছে কবিতার স্থায়ী পংক্তিমালায় ।

তাই তো কবি জীবনানন্দ লিখেছিলেন-চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা...। আসলে অন্ধকার অর্থাৎ সূর্যের আলোহীন পরিবেশই হচ্ছে চুলের জন্য নিরাপদ। এছাড়া ধুলোবালি, অপুষ্টি এগুলোও চুলের ক্ষতি করে থাকে। তাই চুলকে লালন করতে হয় সযত্নে, পরিচর্যায় হতে হয় মনোযোগী। তাই চুল হবে মোহনীয়।


অণুবীক্ষণিকভাবে

একটি সুস্থ চুলের তিনটি স্তর লক্ষ্য করা যায়। সবচে বাইরের আরবণটি হচ্ছে কিউটিকল। যাকে দেয়ালে লাগানো টাইলসের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এটিই চুলের উজ্জ্বলতা দেয়। এর নিচে থাকে কোমল প্রোটিন কর্টেক্স স্তর এবং একদম ভিতরে থাকে মেডুলা স্তর। চুলের এই স্তরগুলো যখন মসৃণভাবে বজায় থাকে তখন সেটা উজ্জ্বল ঝলমলে হয়।

কিন্তু কিউটিকল স্তরটি সামান্য অযত্নে সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। চুলের নিজস্ব উজ্জ্বলতা ছাড়াও পরোক্ষভাবে চুলকে উজ্জ্বল করার পিছনে কিছু হরমোনেরও ভূমিকা আছে। এইসব হরমোন করোটি ত্বক বা স্কাল্পকে তৈলাক্ত রাখে। যে তৈলাক্ততা চুলেও ছড়িয়ে যায়। কাজেই এই হরমোনের কমতি হলে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হবে।

তবে চুলের উপাদান বলতে মূলত প্রোটিন বা কেরাটিন স্তরকেই বোঝায়। চুলের রং ঘনত্ব, স্থায়ীত্ব, পুরুত্ব ইত্যাদি নির্ভর করে কিছু মিনারেল যেমন-কপার, জিংক, আয়রন এবং ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ইত্যাদি যে কোন একটির অভাবসহ অনেক কারণের উপর।


চুল যে কারণে রুক্ষ হয়

১.  মেকানিক্যাল কারণ খুব বেশি মাথা আঁচড়ানো ভাল নয়। ভেজা চুল কখনোই আঁচড়ানো ঠিক নয়। তেমনি খোলা বাতাসে বেশিক্ষণ চুল উড়ানোও ভাল নয়, যেমনটি হয়ে থাকে হেলমেট বিহীন ঘটর সাইকেল চালকের ক্ষেত্রে।

২. প্রথমে চুলকে স্ফীত করে এবং পরে চুল নিজেই চুপসে যায়। চুল ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এছাড়া খর পানিও চুলের উজ্জ্বলতাকে নষ্ট করে বলে মনে করা হয়।

৩. ফটো অক্সিডেশন-সূর্যরশ্মি চুলের ক্ষতি করে। সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে চুলের গাঠনিক সম্পৃক্ততাকে দুর্বল করে দে যেসমস্ত পুষ্টি উপাদান চুলের কাজে আসবে সেগুলোকে খাবারের মাধ্যে করাটাই যুক্তিযুক্ত। তার মানে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো হয় খাবারে থাকতে হবে নতুবা ট্যাবলেট-ক্যাপসুল, সিরাপ হিসেবে এগুলো গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এইসব উপাদান চুলে মেখে লাভ নেই।

এগুলো চুলে সরাসরি ঢুকবে না। অনেকেই চুলে ডিম থেকে শুধু করে অনেক দামি খাবার মেখে থাকেন। এগুলো না মেখে যদি মুখে গ্রহণ করতেন তাহলে নিশ্চয়ই কিছুটা পুষ্টি পাওয়া যেত। কেউ যদি সুষম খাবার অথবা মিনারেল ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার খেয়ে থাকেন তবেই তার চুল আপনা আপনি স্বাস্থ্যময় থাকবে।


চুলের আগা ফাটা

চুলের আগা ফাটা অনেকেরই সমস্যা। এর বৈজ্ঞানিক নাম ট্রাইকোপ টিলোসিস। এই সমস্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে-অতিরিক্ত লম্বা চুল। অতিরিক্ত লম্বা চুল বলতে কতটুকু পরিমাণ লম্বাকে বোঝায়। বিষয়টি খোলাসা করে বলা যাক ।

চুল লম্বা হওয়ার বিষয়টি জন্মগত ও হরমোনগত প্রভাবের ব্যাপার। যার চুল সর্বাধিক যতটুকু পরিমাণ লম্বা হবে। সেটাই তার জন্য অতিরিক্ত লম্বা চুল। অর্থাৎ কারো চুল যদি সর্বোচ্চ ঘাড় পর্যন্ত লম্ব হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ঐ পরিমাণ চুলকেই তার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত লম্বা চুল বলা যেতে পারে। একইভাবে কারো চুল কোমর অবধি নামলে সেক্ষেত্রে ঐ পরিমাণকে তার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত লম্বা চুল বলা যায়।

মোটকথা ক্ষেত্র বিশেষে চুল সর্বাধিক যতটুকু লম্ব হবে সেটাই তার জন্য অতিরিক্ত লম্বা চুল। আর চুল এই লম্বা হওয়ার মাত্র অতিক্রম করলেই চুলের আগা ফেটে যাবে। তাই চুলের আগা ফাটলে ফাটা অংশটুকু কেটে দেয়ার প্রচলিত ধারণাটি এক্ষেত্রে ঠিকই আছে।

এছাড়া চুলে বেশি বেশি হিট দেয়া অর্থাৎ হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার, ব্লিচ করা, বেশি ম্যাসেজ করা, অতিরিক্ত চুল আঁচড়ানো, অতিরিক্ত রোদ লাগানো এবং পুষ্টির অভাবেও চুলের আগা ফাটতে পারে। চুল আঁচড়ানোর জন্য খুব বেশি ঘন ঘন চিরুনি ব্যবহার করা ঠিক নয়।


আরও পড়ুন: চুল সম্পর্কে কয়েকটি ভুল ধারণা | Hair Tips Bangla


তেল না দিলে মাথা গরম হয়?

তেল না দিলে মাথা গরম হয় এরকম কথা অনেকেই বলেন। এই কথার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে ?

মাথার ত্বকে যখন তেল মাখা হয় তখন এই তেল একটি প্রতিরোধক আবরণ সৃষ্টি করে । তখন শরীরের তাপ আর বাতাসে শোষিত হতে পারে না। অর্থাৎ শরীরের তাপ শরীরেই জমা থাকে এবং শরীরের তাপ বৃদ্ধি পায়।

এজন্যই রোগীর হাত-পা ঠান্ডা হলে তার হাতপায়ে তেল মালিশ করা হয়। ব্যবহারে মাথা ঠান্ডা হয় কীভাবে বোঝানো সম্ভব। এর কারণ যারা বিজ্ঞান বোঝেন তাদেরকে


প্রতিদিন চুলে তেল দিলে কি হয়

একটি উদাহরণ দেয়া যাক। পানির তাপমাত্রা কিন্তু আবহাওয়ার তাপমাত্রার সমান। অথচ পানি গায়ে ঢাললে ঠান্ডা লাগে। কারণ পানির আরো তাপ শোষণের ক্ষমতা আছে । তখন ত্বক থেকে পানি তাপ শোষণ করে নেয় এবং আমরা ঠান্ডা অনুভব করি। ঠিক একইভাবে তেলও মাথার ত্বক থেকে তাপমাত্রা শোষণ করে নেয় এবং মাথা ঠান্ডা রাখে।

কিন্তু একটা পর্যায়ে তেল যখন তাপ শোষণের ক্ষমতা হারায় তখন তেল কর্তৃক সৃষ্ট প্রতিরোধক স্তর পেরিয়ে বাড়তি তাপমাত্রা বাতাসের সংস্পর্শে আসতে পারে না। যার ফলশ্রুতিতে মাথার ত্বকের তাপমাত্রা তখন বাড়তে থাকে। কাজেই তেল ব্যবহারে মাথা ঠান্ডা হওয়ার ব্যাপারটি খুবই ক্ষণস্থায়ী।


কতদিন পর পর চুলে শ্যাম্পু করা উচিত

আমাদের দেশে মাথা ঠান্ডা করার জন্য মাথায় তেল ব্যবহার করতে হয়। অথচ মাথায় তেল ব্যবহার না করে উন্নত বিশ্বের লোকজন (গরম মাথা নিয়ে )চাঁদে পৌঁছেছেন। চুল পরিষ্কার রাখাটাই আসল

চুলের স্বাভাবিক যত্নে সপ্তাহে ১ বার বা প্রয়োজনে ২ বার একটি সাধারণ নিউট্রাল চরিত্রের শ্যাম্পু দিয়ে চুলের ধূলো ময়লা দূর করতে হবে। তবে প্রতিদিন চুল ধোয়ার প্রয়োজন হলে বা চুলে যদি রোজই ময়লা / জমে সেক্ষেত্রে 'ডোভ' সাদা সাবান দিয়ে চুল ধোয়া যেতে পারে।

চুল কি টানলে লম্বা হয় ?

চুল কি টানলে লম্বা হয় ?

কিলিয়ে যেমন কাঁঠাল পাকানো যায় না, চুল তেমনি টানলে লম্বা হয় না। যারা চুল লম্বা করার আশায় টাইট করে চুল বাঁধেন তারা আসলে ভুল করছেন। চুল লম্বা হওয়ার বিষয়টি জেনেটিক বা হরমোনের প্রভাবের উপর নির্ভর করে।


মাথায় খুশকি

মাথায় খুশকি হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। কারণ নির্ণয় করে তার চিকিৎসা করলে খুশকি অনেকটাই দমন করা যায়। একটা কথা মনে রাখতে হবে-ঘুশকি চিরতরে দূর করা সম্ভব নয়। তবে মাথা পরিষ্কার রাখলে খুশকি হওয়ার প্রবণতা কমে। মাথায় তেল, খৈল ব্যবহারে খুশকি দূর হয় না।


বলা যেতে পারে, এগুলো ব্যবহারে তেল চিপচিপে হয়ে খুশকি মাথার ত্বকে লেগে থাকে বলে দেখা যায় না। খুশকি দূর করার জন্য পলিটার লিকুইড জাতীয় শ্যাম্পু অনেকের ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী হয়। চুলে বাংলাস থাকলে এন্টি ফাংগাল শ্যাম্পুও আছে সেটাকে দমনের জন্য।


খুশকি কি ছোঁয়াচে

কাজেই খুশকি দমনের জন্য নির্ধারিত শ্যাম্পু চুল ধোয়ার কাজে নিয়মিত ব্যবহার করলে খুশকি অবদমিত হয়ে থাকবে। তবে সঠিক শ্যাম্পু নির্বাচনের জন্য চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া ভাল। ঘনঘন শ্যাম্পু ব্যবহারে অনেকের চুল শুষ্ক হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ডোভ সাবান দিয়ে মাথা খুলে শুষ্কভাব কিছুটা কমবে।


চুলের উজ্জ্বলতায় সিলিকন সলিউশন

রুক্ষ চুলে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাম্প্রতিক অবদান হচ্ছে সিলিকন পলিমার। এটা গন্ধহীন একটি দ্রবণ। এরা চুলের কোন ক্ষতি করে না এবং চুলের ক্ষতিকে পুষিয়েও দিতে পারে না। স্কুল ধুয়ে ফেললেই কন্ডিশনারের উজ্জ্বলতা নিভে যায় ।

কাজেই সাময়িক উজ্জ্বলতার পেছনে না ছুটে, স্বাভাবিক চুল ধারণের চেষ্টা করা উচিত তাতেই চুল উজ্জ্বল ঝলমলে হবে। সেই সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার।


আরো কিছু বৃথা ব্যয়

চুল ঘন, কালো করার জন্য চুল কামিয়ে লাভ নেই। এই ব্যাপারগুলো জন্মগত এবং হরমোনগত ব্যাপার। এমনকি চুল পাঁকলেও তেমন কিছু করার নেই।

বংশগত কারণে অনেকের চুল পড়ে যায়- এক্ষেত্রে একই কথা, কার্যকরী কোন ব্যবস্থা নেই। তবে রোগের কারণেও চুল পড়ে সেক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসায় চুল পড়া বন্ধ হবে। চুল স্বাভাবিকভাবে শুকানোই ভাল।



আমদের শেষ কথা

চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য মাথায় ম্যাসেজ কিংবা বারবার চুল আঁড়ানোতে লাভ নেই বরং ক্ষতিই হয়। যারা বিউটি পার্লারে যান তারা চুলের কৌশল সম্পর্কে জেনে নেবেন।

Previous Post Next Post

Contact Form