BNCC- Bangladesh National Cadet Corps (বিএনসিসির) ইতিহাস:
একই সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউটিসি চালু করা হয়। ১৯২৭ সালের নভেম্বর মাসে ক্যাপ্টেন ই. গ্রুম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ জন শিক্ষক ও ১০০ জন ছাত্রকে প্রথম সাহায্যকারী কোরের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করেন। ১৯২৮ সালের জুন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে একে কোম্পানিতে উন্নীত করা হয়। এটি ইউটিসি’র ১২ টি ইউনিটের মধ্যে একটি ছিল। এর নাম দেয়া হয় “১২ ঢাকা কোম্পানি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. মাহমদ হাসান কে অবৈতনিক লে. কর্ণেল পদবী দিয়ে কোম্পানির ভার দেয়া হয়। ১৯৪৩ সালে এর নাম দেয়া হয় “ইউনিভার্সিটি অফিসার্স ট্রেণিং কোর।” ১৯৪৬ সালে শিলং-এ এর প্রথম বার্ষিক অনুশীলন ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৫০ সালে ৬২৫ ক্যাডেট এবং ৪০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে একে একটি ব্যাটালিয়নে উন্নীত করা হয়। পাকিস্তান সরকার ১৯৫৩ সালের ৩০শে জানুয়ারি ইউটিসি’র কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করে। কিন্তু ছাত্রবিক্ষোভের পর ১৯৬৬ সালে পুনরায় এর কার্যক্রম শুরু হয়।
সেই সালেই এর নামকরণ করা হয় “ পাকিস্তান ক্যাডেট কোর বা পিসিসি ” এবং স্কুল-কলেজের ছাত্রদের জন্য “জুনিয়র ক্যাডেট কোর বা জেসিসি” গঠন করা হয়। ১৯৭১ সালে পিসিসি ও জেসিসি’র ক্যাডেটরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ২২ জন ক্যাডেট শহীদ হন। স্বাধীনতার পর “পাকিস্তান ক্যাডেট কোর” নামটির স্থলে “বাংলাদেশ ক্যাডেট কোর” নামটি প্রতিস্থাপিত হয়।
৩১ শে মার্চ, ১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ক্যাডেট কোরের তিনটি পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২৩ শে মার্চ, ১৯৭৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একটি সরকারি আদেশ বিসিসি, জেসিসি কে সংগঠিত করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা বিএনসিসি প্রতিষ্ঠা করেন।
BNCC কি?
BNCC হচ্ছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী ক্যাডেটদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় সারির, আধাসামরিক, সেচ্ছাসেবী বাহিনী। এটি সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা, জেসিও, এনসিও, বেসামরিক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত।
এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর– বিএন সিসি হলো সেকেন্ড লাইন ডি-ফেন্স ফোর্স ৷ “Knowledge & Discipline, The Volunteers” এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করে চলা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক এই সংগঠনটির রয়েছে অনেক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস৷ এটা মূলত ৩টি উইংয়ে বিভক্ত৷ যথা– আর্মি উইং, নেভি উইং এবং এয়ার উইং ৷
BNCC মিনিংস কি?
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডে-ট কোর ( Bangladesh National Cadet Corps )
BNCC উদ্দেশ্য কি ?
সৎ ও দক্ষ দেশপ্রেমিক, যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করার মহান উদ্দেশ্যে , বিএনসিসি প্রতিষ্ঠা করা হয় ।
BNCC তে আপনার কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে ?
এসএসসি (SSC) পাস এবং বাকি যোগ্যতা সেনাবাহিনীর মতোই ।
BNCC সাংগঠনিক কাঠামো কি?
বিএনসিসি সংগঠন একটি আধা সামরিক সে্চ্ছাসেবী সংগঠন , যে কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জনকল্যান মূলক কাজ করে থাকে , যেমনঃ
বৃক্ষরোপণ, স্বেচ্ছায় রক্ত দান, এই ছাড়াও যুদ্ধ কালিন সময়ে সামরিক বাহিনী কে সাহায্য করা।
BNCC মনোগ্রাম টি ত্রিভুজের মত কেন ?
• লাল রঙ্গে চেনাশোনা - গঠন চিহ্ন বাইরের লাল বৃত্ত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তের প্রতীক।
• কালো বৃত্ত = কালো অভ্যন্তরীণ বৃত্তকালি, জ্ঞানের উত্স প্রতীক ।জ্ঞান ও শৃঙ্খলা- BNCC এর নীতিমালা কালো বৃত্তের উপর স্থাপিত ।
• গোল্ডেন সার্কেল – গোল্ডেন সার্কে
ল সোনার বাংলা প্রতিনিধিত্ব করে। পিরামিড – কেন্দ্রে পিরামিড জীবনের সংগ্রামের সাথে প্রতীকী, সবসময় যাওয়া কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং।
পিরামিডের রঙ- ত্রি রঙীন পিরামিড সেনাবাহিনী, নৌ ও বায়ুকে প্রতিনিধিত্ব করে যা ভবিষ্যতে নেতৃত্বের জন্য BNCC ক্যাডেটদের ট্রেন এবং ঘরে রাখে।
স্বেচ্ছাসেবক – মানুষের ভিত্তি এবং মৌলিক কোনও ভয় বা অনুগ্রহ ছাড়াই স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে সেবা করা হয়। যেমন BNCC এর sprit হয় ‘ভলান্টিয়ার্স’।
BNCC কয়টি শাখা ?
BNCC রয়েছে ৩-টি শাখা। এগুলো হলোঃ
- সেনা শাখা
- নৌ শাখা
- বিমান শাখা
BNCC রেজিমেন্ট সেনা শাখার অধিনে কয়টি রেজিমেন্ট?
রয়েছে ৫টি এগুলো হলোঃ
- রমনা রেজিমেন্ট
- ময়নামতি রেজিমেন্ট
- কর্ণফূলি রেজিমেন্ট
- মহাস্থান রেজিমেন্ট
- সুন্দরবন রেজিমেন্ট
BNCC প্রশিক্ষণ কি কি ?
- ড্রিল
- অস্ত্র প্রশিক্ষণ
- মাঠ নৈপুণ্য এবং শারীরিক প্রশিক্ষণ
- সংস্থা
- ক্ষুদ্র ও রণকৌশল
- সামরিক ইতিহাস
- সামরিক বিজ্ঞান
- রীতিবিরুদ্ধ যুদ্ধবিগ্রহ
- ম্যাপ পড়া
- প্রাথমিক চিকিৎসা, স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন
- কমান্ড এবং নেতৃত্ব
How to join BNCC | কিভাবে BNCC যোগদান করবেন
- ভর্তিচতু ছাত্র/ছাত্রীর একাডেমীক পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনা করতে হবে, যাতে মেধাবী ক্যাডেট নির্বাচন করা যায়।
- সুঠাম-শারীরিক গঠন এর অধিকারী হতে হবে। উচ্চতা, ওজন ইত্যাদি বিবেচনা করতে হবে।
- তাদের ভবিষ্যতে লক্ষ্যও জানতে হবে, শুধুমাত্র সৈনিক পদে ভর্তির লক্ষ্য নিয়ে ক্যাডেট ভর্তি করা যাবেনা।
- অন্যান্য পারদর্শিতা বিবেচনা করতে হবে।
- প্লাটুন পর্যায়ে বিএনসিসিও/পিইউও/টিইউগণ ভর্তিচ্ছুক সকল ছাত্র-ছাত্রীদের নামীয় তালিকা প্রস্তাবিত ছক আকারে ব্যাটালিয়ন এ্যাডজুটেন্ট এর নিকট পাঠাবেন।
- ব্যাটালিয়ন এ্যাডজুটেন্ট উক্ত তালিকা থেকে শুন্য আসনের সর্বোচ্চ দ্বিগুণ পরিমাণ ভর্তিচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করবেন।
- অতঃপর ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় স্থিত বিভিন্ন জেলায় জেলায় জেলায় গমন করত। ব্যাটালিয়ন এ্যাডজুটেন্টের প্রত্যেক্ষ তদারকির মাধ্যমে ক্যাডেট নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি জেলায় সুবিধাজনক স্থানে কোন একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের ভর্তিইচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীগণ সমবেত হবে যেখানে ব্যাটালিয়ন এ্যাডজুটেন্ট/অধিনায়ক স্কোয়াড্রন/ফ্লোটিলা কমান্ডার সরাসরি নিরীক্ষা করে চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করবেন।
- এ্যাডজুটেন্ট/অধিনায়ক স্কোয়াড্রন/ফ্লোটিলা কমান্ডার এর অনুপস্থিত/স্বল্পতার ক্ষেত্রে প্রয়োজনবোধে রেজিমেন্ট কমান্ডার এর তত্ত্বাবধানে ক্যাডেট নিরীক্ষা করত। চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ণ করতে হবে।
BNCC পদবী কি কি ?
ক্যাডেট পদবী হলো –
- ক্যাডেট
- ক্যাডেট ল্যান্স কর্পোরাল
- ক্যাডেট কর্পোরাল
- ক্যাডেট সার্জেন্ট
- ক্যাডেট আন্ডার অফিসার
- বিএনসিসিও পদবী
- পিইউও/টিইউও
- লেফটেন্যান্ট
- ক্যাপ্টেন
- মেজর
- লেফটেন্যান্ট কর্নেল
ক্যাডেট ট্রেইনিং
একটি সফল ক্যাডেট হিসেবে গড়তে বিএনসিসি ক্যাডেটদের বিভিন্ন ট্রেইনিং দেয়া হয়৷ এগুলো হলো ঃ
মিলিটারি ট্রেইনিং:
- ড্রিল
- অস্ত্র সম্পর্কিত ট্রেইনিং
- ফিল্ড ক্রাফট
- ফিজিক্যাল ট্রেইনিং
- অরগানাইজেশন
- মাইনর ট্যাকটিক্স
- মিলিটারি হিস্ট্রি
- মিলিটারি সায়েন্স
- আনকনভেনশনাল ওয়ারফেয়ার
- ম্যাপ রিডিং
- হাইজিন এন্ড স্যানিটেশন
- কমান্ড এন্ড লিডারশীপ
- উইন্টার কালেক্টিভ ট্রেইনিং।
- প্লাটুন লেভেল ট্রাক্টি
BNCC ক্যাম্পিং:
1.ক্যাপসুল ক্যাম্প : এই ক্যাম্প সাধারণত 7- 10 তিন স্থায়ী হয়। 2.বার্ষিক/অ্যানুয়ান ক্যাম্প: এ ক্যাম্প সাধারণত 15-17 তিন স্থায়ী হয়।
3. সেন্ট্রাল ক্যাম্প: 2থেকে 3 সপ্তাহ ধরে চলে এই ক্যাম্পটি ঢাকার সাভারে অনুষ্ঠিত হয়ে থোকে।
4. উইন্টার ক্যাম্প: ক্যাম্পটি শীতকালে অনুষ্ঠিত হয়৷ একে বিএনসিসির সবচেয়ে মজাদার ক্যাম্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
5. রুটি-ন ট্রেইনিং: নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বছরে ১২০পিরিয়ড রুটিন ট্রেইনিং সম্পন্ন করা হয়।
বিএনসিসি স্পেশালাইজড ট্রেইনিং:
- লিডারশীপ
- আনআর্মড কমব্যাট
- Rappling
- ফার্স্ট এইড এন্ড রেসকিউ
- ডিসেস্টার ম্যানেজমেন্ট
- ন্যাশনাল প্যারেড
- কম্পিউটার ট্রেইনিং
- ব্যান্ড প্লাটুন ট্রেইনিং
BNCC সুবিধাবলি কি ?
BNCC মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীগণ সহজেই সামরিক বাহিনীগুলোতে যোগ দিতে পারেন। তারা সামরিক বাহিনীগুলোর মতো শারীরিক ও মানসিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন। সামরিক বাহিনীগুলোতে যোগ দেওয়ার সময় তাদের লিখিত,মৌখিক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা দিতে হয়না।
এবং SELECTED ক্যাডেটরা সরাসরি ISSB (আইএসএসবি) পরীক্ষাতে অংশগ্রহণ করে থাকে এবং BNCC ক্যাডেট অনেক সুযোগ- সুবিধা পায়৷ প্রতি ক্যাম্প শেষে তাদেরকে উপযুক্ত সম্মানী দেয়া হয়৷ তাছাড়া বিএনসিসির সার্টিফিকেট উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গমনেও বিশেষ সহায়তা করে।
আমাদের দেশের সংকটকালীন পরিস্থিতিতে ক্যাডেটরা ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ সাধারণ মানুষদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে ৷ এভাবে তারা স্থানীয় প্রতিরক্ষা ফোর্স বা Territorial Force গঠনে ভূমিকা পালন করে৷ যদি সামরিক বাহিনী থেকে নির্দেশ আসে তবে তারা সম্মুখ যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করতে পারে৷
সামরিক বাহিনী ততে যোগদানের সময় BNCC সার্টিফিকেট থাকলে, কিছুটা সুবিধা পাওয়া যায়৷ সামরিক বাহিনীর রিটেন পরীক্ষায় তাদের অংশগ্রহণ না করলেও চলে ৷ বিএনসিসি ক্যাডেটদের পারফর্মেন্স অনুযায়ী তাদেরকে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভারত ইত্যাদি দেশে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে ভিজিটের সুযোগও দেওয়া হয়ে থাকে৷
প্রতি বছরই বিএনসিসির অনেক ক্যাডেট দিল্লীতে ভারতের স্বাধীনতা দিবস প্যারেডে অংশগ্রহণ করে৷ বিএনসিসি ক্যাডেটরা সর্বদা দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করে৷ বিএনসিসির মাধ্যমে ছাত্রদের দেশসেবার মনমানসিকতা জেগে ওঠে এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সমুন্নত হয় ৷
এভাবেই BNCC বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর–বিএনসিসি দেশের উন্নয়নে সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে৷